গতকাল বৃহস্পতিবার অক্টোবর ১২, ২০২৩, আমরা দুজন Bayer’s Lake এর দিকে যাচ্ছি পুজোর বাজার করতে , Bayer’s Road থেকে Highway তে উঠে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর “ও” আমার পাশ থেকে বলে উঠলো “ দেখো মেঘগুলো দেখতে কি সুন্দর লাগছে “|আমি খুব নিশ্চিন্ত মনে পাশে বসেছিলাম,ওর কথা শুনে আমি সাথে সাথে তাকালাম , আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম|এত সুন্দর মেঘ মনে হয়না আমি আমি কখনো আগে দেখেছি | আমি প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসি |প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন আমায়ে হাথ্ছানি দিয়ে ডাকে | মনে হচ্ছিল এ যেন মেঘ নয়ে , এ যেন দুধের সাদা পাহাড় |যতই এগিয়ে যাচ্ছি ততই যেন আমি আরো অভিভূত হচ্ছি |মনে হচ্ছিল মেঘগুলো যেন অচল ,নিথর হয়ে দাড়িয়ে আছে এবং সন্ধ্যাদেবিকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করে আছে|সাদা মেঘের পাহাড়ের পেছনে উঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে পড়ন্ত রবির আলোক ছটা|সে এক অপূর্ব দৃশ্য, এ নীরব সাক্ষীকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছি ভাবাপ্লূত মনে | মনের অজান্তে চলে গেলাম অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে |মেঘের আরো সৌন্দর্য আমার মনের গভীরে নাড়াদিয়ে উঠলো যা আমাকে ভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট করেছিল|উড়োজাহাজ যখন মেঘের অনেক ওপরে চলে ,নিচের মেঘপুঞ্জ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে|মেঘের সে রূপটা আমার কাছে মনে হয়ে বরফের পাহাড় , সেও আবার অচল , নিথর|তাকে দেখি ওপর থেকে , দেখি তার উঁচু নিচু চূড়া , কোথাও ঘনীভূত , আবার কোথাও হালকা ,কোথাও আবার এক টুকরো বিচ্ছিন হয়ে উঁড়ে চলে যাচ্ছে মনের আনন্দে এবং ধীরে ধীরে অক্ষে কোথাও বিলীন হয়ে গেল|
উঁচু পাহাড় থেকে মেঘের যে রূপ দেখেছি তারও একটু বর্ণনা দিচ্ছি । গিয়েছিলাম কালিম্পং,দার্জিলিং এর কাছে। খুব ভোরে পাহাড়ের উপরে ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। দেখলাম একরাশ মেঘ দূর থেকে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। দেখতে দেখতে আমাদের ভিতর দিয়ে ঘরে ঢুকে গেল,সাথে আমাদের ও ভিজিয়ে দিয়ে গেল এবং একটা পরম ক্লান্তি বিদূরিত ছোঁয়া দিয়ে গেল।
শরতের মেঘের আলাদা সৌন্দর্য। আকাশ থাকে পরিষ্কার গারো নীল, তারই ছত্র–ছায়ায় হাল্কা সাদা মেঘ দেখতে কি না অপূর্ব লাগে। কিছুক্ষণ এক নিমেষে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় মেঘ গুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ,আস্তে আস্তে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাচ্ছে এবং কোন এক সময়ে বিলীন হয়ে গেল। রাতে নীল আকাশে চাঁদের আলোতে খণ্ড মেঘ দেখতে দেখতে নানান আকৃতির মূর্তির মতো মনে হয়।দেখতে মন্দ লাগে না।
ভোরে সূর্য উদয়ের পূর্ব ক্ষণে মেঘের রূপ অপূর্ব। সোনালি বর্ণের রোদের ছটায় সাদা মেঘ হয়ে উঠবে রক্তাভ,ভীষণ সুন্দর। যতই দেখি যেন মন ভরে না,চোখ ফিরাতে পারি না। তবে সূর্য দেবতা তো বসে থাকেন না। তিনি নিয়ম মাফিক তার কাজ সম্পাদন করেন। একসময়ে উপরে উঠে আসেন এবং মেঘ কে তার রক্তাভ সৌন্দর্য ত্যাগ করতে হয়।
আবার গোধূলি লগ্নে সূর্য অস্তাচলে নামলে তার পড়ন্ত ছটা মেঘের গায়ে আবীর ছড়ায়ে দেয় যেন,মনে হয় মেঘ অচল নিথর হয়ে সেদিনের জন্য সূর্য দেবতা কে বিদায় জানাচ্ছে। সূর্য অস্ত গেলে মেঘ তার স্বাভাবিক শ্বেত বর্ণে ফিরে আসে।
প্রকৃতির কত রূপ। প্রত্যেকতা রূপেরই ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি। কখনও শান্ত কখনও ভয়ংকর। ধরা যাক এ মেঘ ,যার এত সৌন্দর্যের বর্ণনা দিলাম, সে এক ই মেঘ ঘনীভূত হয়ে যখন উগ্র হয়ে মুষলধারে বর্ষণ করে এবং বন্যার রূপ নেয় তার ফল কখনও কখনও মারাত্মক হয়ে ওঠে। মানুষ,জীবজন্তু,গাছপালা যা কিছু এ বন্যার স্রোতের মুখে পড়ে তার আর রক্ষা নেই , সে তখন হয়ে ওঠে কাল। গ্রাস করে যা কিছু সামনে পরে। আবার একিই মেঘ বৃষ্টিরূপে শান্তিবারি দিয়ে এ ধরার বুককে করে তোলে শস্যশ্যামলা ,ভরে দেয় মানুষের মন প্রান আনন্দ উল্লাসে।
আকাশ ,মেঘ আমরা প্রতিনিয়ত দেখছহি,খুব কমসময়ই আমরা তার রূপের বিশ্লেষণ করি। ভেবে দেখলে অবাক লাগে প্রকৃতির নিয়মে তারা কত রূপ বদলায় এবং প্রকৃতিকে কতভাবে সাজায়, প্রকৃতি কারো অধীনে নয়। তার নিয়মে, তার গতিতে যে চলে, তার বিভিন্ন রূপ কে ভালবাসার মধ্যেই আনন্দ ও তৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যায় যদি সে রূপ দেখার অন্তর চক্ষু ও বহিঃচক্ষু দুইই থাকে।